১= মিরাজের ঘটনা
মিরাজের সূচনা ঘটে নবীজি সাঃ এর চাচতো বোন হযরত উম্মে হানির ঘর থেকে এক্ষেত্রে ৩টি বর্ণনা পাওয়া যায় ১, হযরত রাসুল সাঃ ঐ রাতে কিছু সময় ছিলেন আবু তালিবের উপাত্যকায় ২, তিনি সাঃ কিছু সময় ছিলেন হাতীমে কা’বায়
৩, সর্বশেষ তিনি ছিলেন হযরত উম্মে হানীর ঘরে যেখান থেকে ইসরা শুরু হয়েছিলো। নবীজি সাঃ বলেন আমি হঠাৎ করে দেখলাম উম্মে হানীর ঘরের ছাদ খুলে গেলো ২ জন ফেরেশতা কেউ আবার বলেছেন ৩ জন ফেরেশতার কথা বলা হয়েছে ফেরেশতারা ঘরে প্রবেশ করলেন, করে হযরত মিকাইল আঃ বললেন আল্লাহ কাকে দাওয়াত করেছেন জবাবে হযরত জিব্রাইল আমীন আঃ বললেন যিনি মাঝখানে শুয়ে আছেন, যার চেহারা মোবারক থেকে নূর চমকাচ্ছে নূরের জ্যোতি বের হচ্ছে উনাকে আল্লাহ পাক দাওয়াত করেছেন,, এখন প্রশ্ন হচ্ছে নবীজি সাঃ তো ঘুমিয়ে ছিলেন তাহলে সব কিছু দেখলেন কিভাবে,, সেক্ষেত্রে কথা হচ্ছে রাসুলুল্লাহর ঘুম আমাদের মতো স্বাধারণ ঘুম ছিলনা। আমাদের ঘুম প্রথমে আসে মাথায় তার পরে আসে চোখে, তার পরে আসে আন্তরে তার পর আমাদের আর কোন খেয়াল /হুশ থাকেনা আমরা অচেতন হয়ে যাই ,, কিন্তু রাসুল সাঃ এর ঘুৃম এর ব্যাপারে হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রাঃ বলেন রাসুল সাঃ যখন ঘুমাতেন তার সাঃ চোখ ঘুমাতো কিন্তু অন্তর কখনো ঘুমাতো না, এজন্য রাসুল সাঃ যখন ঘুমাতেন, ঘুমের মাঝে ওহী নাযিল হতো আর সেটা আল্লাহর কোরআন হয়ে যেতো। সুতরাং সব কিছু শুনতেন
নবীজি সাঃ বলেন তার পর জিব্রাইল আঃ আমাকে জাগিয়ে হাতে ধরে যমযম কূপের কাছে নিয়ে গেলেন, অতঃপর আমার ছীনা চাক করলেন আমার বক্ষ বিদীর্ণ করে আমার অন্তর বের করলেন, তারপর আমার অন্তর থেকে কিছু জিনিস তিনি বের করে ফেলে দিলেন এবং যমযমের পানি দ্বারা ধূয়ে জান্নাতী নূরের পেয়ালা তে নিয়ে আসা হেকমত আর ইলম দ্বারা আমার অন্তর টাকে ভরে দিলেন। এটা ছিলো রাসুল সাঃ এর ৪র্থ বার ছীনা চাক। রাসুল সাঃ এর জীবদ্দসায় ৪ বার ছীনা চাক হয়েছে। তার পর সেখান থেকে বোরাক যুগে ইসরা করে চলে গেলেন বাইতুক মুকাদ্দাসে মসজিদুল আকসায়, সেখানে তিনি সাঃ অসংখ্য নবী গণের ইমাম হয়ে দু রাকাত নামাজ আদায় করেন এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক তাকে ইমামুল আম্বিয়া এর সম্মান দান করেন। তারপর সেখান থেকে উরুজ তথা মিরাজ এর দিকে মানে উর্ধগমন শুরু, বোরাকের মাধ্যমে হযরত জিবরাইল আঃ কে সাথে নিয়ে। সেখান থেকে
১ম আসমানে গেলেন সেখানে গিয়ে নবীজি সাঃ দেখা পেলেন মানব জাতীর আদি পিতা হযরত আদম আঃ এর, তিনি সাঃ তাকে সালাম দিলেন, আদম আঃ সালামের জবাব দিয়ে স্বাগত জানালেন এবং নবুয়্যতের সিকৃতী দিলেন
তার পর
২য় আসমানে আরোহন করলেন এবং সেখানে হযরত ইয়াহইয়া আঃ ও হযরত ঈসা আঃ এর সাথে সাক্ষাৎ হয় তিনি তাদেরকে সালাম দিলেন তারা তার সালামের জবাব দিলেন এবং তার নবুয়্যতের সিকৃতী দিলেন, তারপর সেখান থেকে
৪র্থ আসমানে আরোহন করলেন, সেখানে গিয়ে সাক্ষাৎ করলেন হযরত ইউসুফ আঃ এর সাথে তিনি সাঃ তাকে সালাম দিলেন, ইউসুফ আঃ সালামের জবাব দিয়ে স্বাগত জানালেন এবং নবুয়্যতের সিকৃতী দিলেন তারপর আরোহন করলেন
৫ম আসমানে, সেখানে গিয়ে তিনি সাক্ষাৎ করলেন হযরত হারুন আঃ এর সাথে, তিনি সাঃ তাকে সালাম দিলেন, হারুন আঃ সালামের জবাব দিয়ে স্বাগত জানালেন এবং তার নবুয়্যতের সিকৃতী দিলেন, তারপর তিনি আরোহন করলেন ৬ষ্ট আসমানে সেখানে তিনি সাক্ষাৎ করলেন হযরত মুসা আঃ এর সাথে তিনি সাঃ তাকে সালাম দিলেন , মুসা আঃ সালামের জবাব দিয়ে স্বাগত জানালেন এবং নবুয়্যতের সিকৃতী দিলেন তারপর
৭ম আসমানে আরোহন করে তিনি সাক্ষাৎ করলেন হযরত ইব্রাহীম আঃ এর সাথে তিনি সাঃ তাকে সালাম দিলেন, ইব্রাহীম আঃ সালামের জবাব দিয়ে স্বাগত জানালেন এবং তার নবুয়্যতের সিকৃতী দিলেন। সবাই নবিজী সাঃ এর জন্য দোয়া করলেন নেককার নবী হিসেবে, শুধু হযরত আদম আঃ ও হযরত ইব্রাহীম আঃ তার জন্য দোয়া করলেন নেককার সন্তান হিসেবে এবং বললেন নেককার নবী।
সেখান থেকে জিব্রাইল আঃ কে সঙ্গে নিয়ে সিদরাতুল মুনতাহা গেলেন। সেখানে এমন একটি বৃক্ষ তিনি দেখলেন
যার পাতা ছিলো হাতীর কানের মতো। সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে হযরত জিব্রাইল আঃ আর সামনে যেতে পারলেন না তিনি অপারগতা স্বীকার করলেন। তারপর রাসুল সাঃ সিদরাতুল মুনতাহা পাড়ি দিয়ে ৭০ হাজার নূরের পর্দা ভেদ করে তিনি চলে গেলেন আরশে আজীমে। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ পাক তার পিয়ারা হাবিবের জন্য অপেক্ষায় অপেক্ষমান ছিলেন
২= মিরাজের তাৎপর্য
মিরাজ রাসূল সা:-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি মুজিজা। মিরাজের এ মুজিজা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ এবং মহিমান্বিত। মুহাম্মাদ সা:-এর দু’টি বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যা অন্য কোনো নবীর ভাগ্যে হয়নি। দুনিয়াতে এ মিরাজের ঘটনা এবং আখিরাতে মাকামে মাহমুদ ও শাফায়াত। রাসূল সা:-এর জীবনে দু’টি ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর একটি মিরাজ। অন্যটি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত। মিরাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ সা:-কে যে সম্মাননা দিয়েছেন, এ সম্মাননা মাখলুকাতের মধ্যে আর কাউকে দেয়া হয়নি। একজনের জন্য একবারই এ মিরাজের আয়োজন করা হয়েছে
মিরাজের ঘটনায় জান্নাত ও জাহান্নামসহ বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির অনেক কিছুই প্রত্যক্ষ করেছেন নবীজী। বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত বর্ণনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য বিচিত্র ঘটনা থেকে নির্ভরযোগ্য ঘটনা উল্লেখ করলে বিবরণ পূর্ণতা পাবে বলে মনে হয়। যেমন-
১. এ রাতে নবীজী জাহান্নাম পরিদর্শনে গেলে মালেক নামক জাহান্নামের প্রধান রক্ষী নবীজীকে সালাম ও অভ্যর্থনা জানান।
২. তিনি দাজ্জালকেও দেখেছিলেন।
৩. এমন এক দল লোকের পাশ দিয়ে নবীজী গমন করেছিলেন, যাদের নখ ছিল তামার। এই নখ দিয়ে তারা স্বীয় মুখমণ্ডল ও বক্ষ আঁচড়াচ্ছিল। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরাইল নবীজিকে জানালেন, এরা সেই লোক, যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত। অর্থাৎ একে অপরের গিবত ও মানহানি করত। অন্য এক বর্ণনায় জানা যায়; বরং দুনিয়াতে গিবতকারী এসব লোকদের মৃত ভক্ষণ করতে দেখেছিলেন নবীজী।
৪. এই মহান রাতে নবীজী এমন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছিলেন, যাদের ঠোঁট কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল, ঠোঁট কাটা মাত্র তা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্ববৎ হয়ে যেত। এদের সম্পর্কে প্রশ্ন করলে জিবরাইল নবীজীকে উত্তর দিলেন, এরা এমন বিষয়ে বক্তৃতা ও ওয়াজ করত, যা তারা নিজেরা আমল করত না।
৫. শবেমিরাজে নবীজী এমন লোকদের দেখলেন, যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটি ভর্তি ছিল সাপে, যা বাইরে থেকেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। প্রশ্ন করা হলে জিবরাইল জানালেন, এরা সুদখোর।
৬. মহানবী সা: জান্নাত দেখার সৌভাগ্যও লাভ করেছিলেন।
৭. প্রাসাদে ঘেরা একটি নহর দেখতে পেলেন, যার পানি ছিল মেশকের চেয়ে বেশি সুগন্ধীময়। এটি কী- নবীজী জানতে চাইলে জিবরাইল আ: বললেন, এর নাম ‘কাওসার’, যা আপনার প্রতিপালক একমাত্র আপনার জন্যই সুরক্ষিত করে রেখেছেন।
৩= মিরাজের রাতের আমল
শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো আমলের কথা শরীয়তে উল্লেখ করা হয়নি। তারপরও এ রাতে ধর্মপ্রাণ মানুষ বিশেষ ইবাদত বন্দেগিতে লিপ্ত থাকতে পছন্দ করেন। বিশেষত এ রাতকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মসজিদে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রথা বহুদিন যাবত্ চলে আসছে। অনেকে এ উপলক্ষে নফল রোজা রাখেন। তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করেন।
উম্মে সালমা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজি (সা.)–এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।’ কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, নবীজি (সা.) রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন; রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারিমি)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার (নবীজির) মাস; রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ (তিরমিজি)। অপর এক বর্ণনায় আছে রাসুল সাঃ বলেছেন ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা) খেত চাষ দিল না এবং শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে) খেত আগাছামুক্ত করল না; সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি)।
রজব মাসের বিশেষ আমল হলো বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বিশেষত প্রতি সোমবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং মাসের ১, ১০; ১৩, ১৪, ১৫; ২০, ২৯, ৩০ তারিখ রোজা রাখা। অধিক হারে নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আউয়াবিন; তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি আদায় করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক নামাজে এ দোয়ার মাধ্যমে রজব ও শাবান মাসে রবকত লাভের পাশাপাশি রমজান মাসের রহমত বরকত মাগফিরাত ও নাজাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন