ভাস্করাচার্য
Source

প্রধান কৃত তথ্য গুলো Michael H. Hart এর বিশ্ব বিখ্যাত বই The 100 হতে সংগৃহীত!

দক্ষিণ ভারতের বিজ্জবিড় নামে এক নগরে বাস করতেন ভাস্করাচার্য। অঙ্ক এবং জ্যোতিষ দু’টি বিষয়েই ছিল তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য। নগরের সীমানা ছাড়িয়ে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূর দেশে। দেশের রাজা মহারাজা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করত। বিধবা কন্যা লীলাবতীর জীবনের দুঃখ ভোলাবার জন্য ভাস্করাচার্য কন্যাকে বিদ্যাশিক্ষা দিতে আরম্ভ করেন। আর সেই জন্য রচনা করলেন গণিত শাস্ত্রের বিশাল এক গ্রন্থ ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি। 

এই গ্রন্থের মোট চারটি খণ্ড। প্রথম খণ্ডের নাম লীলাবতী। এতে সাধারণ গণিত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। লীলাবতী পৃথিবীর আদিমতম গণিতের গ্রন্থ। প্রাচীন ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা। আনুমানিক ১১৫০ খ্রিস্ট্রাব্দে ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ রচিত হয়েছিল। তখন ভাস্করাচার্যের বয়স মাত্র ৩৬। ইউরোপে প্রথম গণিতের বই প্রকাশিত হয়েছিল ১২০২ খ্রিস্টাব্দে। লিওনার্দো দ্য পিসা নামে এক পণ্ডিত এই বই রচনা করেছিলেন। আনুমানিক ১১১৪ খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্যের বিজ্জবিড় গ্রামে ভাস্করাচার্যের জন্ম হয়। তাঁর জীবন কাহিনি সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তার কতটুকু সত্য কতটুকু কল্পনা বিচার করা কঠিন। 

তবে সাম্প্রতিক কালে মহারাষ্ট্রের চালিসগাও নামে একটি স্থান থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি পুরনো মন্দিরের শিলালিপি থেকে জানা যায় ভাস্করাচার্যের পিতার নাম ছিল মহেশ দৈবজ্ঞ; তাঁর পিতামহের নাম মনোরথ; তাঁর ঊর্ধ্বতন পুরুষের নাম যথাক্রমে প্রভাকর, গোবিন্দ, ভাস্করভট্র এবং ত্রিবিক্রম। ভাস্করাচার্যের দুই পুত্রের নাম জানা যায়, লক্ষ্মীধর ও চঙ্গদেব। এঁরা সকলেই ছিলেন শাস্ত্রজ্ঞ। পাণ্ডিত্যের জন্য তাঁরা ছিলেন সকলের শ্রদ্ধেয়। শিলালিপিতে প্রত্যেকের সম্পর্কেই রয়েছে প্রশস্তি। তবে ভাস্করাচার্যের প্রশংসায় মুখরিত হয়ে উঠেছেন লিপিকার। তাঁকে বলা হয়েছে ‘ভট্র পারদর্শী তিনি সাংখ্য, তন্ত্র, বেদে মহাপণ্ডিত। তাঁর তুল্য জ্ঞান আর কারও নেই। 

কাব্যে, কবিতায়, ছন্দে অতুলনীয়। গণিতে তিনি মহাজ্ঞানী, তাঁর চরণে প্রণাম জানাই’। এই লিপিতে কোথাও লীলাবতীর উল্লেখ নেই। তা হলে লীলাবতীর অস্তিত্ব কি শুধুই কাল্পনিক! এই বিষয়ে নানা রকম মত আছে। অনেকের ধারণা লীলাবতী ছিলেন ভাস্করাচার্যের কন্যা। তিনি অত্যন্ত বিদূষী ছিলেন। লীলাবতী অংশটি তাঁরই রচিত। ভাস্করাচার্য সমগ্র ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’ গ্রন্থটি কন্যাকে উৎসর্গ করেছিলেন। কেউ বলেন লীলাবতী নামে কোন নারীরই অস্তিত্ব নেই। কারণ এই বইটির বিভিন্ন শ্লোকে কোথাও শখে, কোথাও প্রিয়ে, চঞ্চলা ইত্যাদি সম্বোধন করেছেন। কন্যাকে কেউই প্রিয়ে বা সখে বলে সম্বোধন করে না। সম্ভবত ভাস্করাচার্য জ্ঞানের দেবী সরস্বতীকেই বিভিন্ন সম্বোধনে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *